ব্যবসার উন্নতির/সফলতার জন্য ওয়েবসাইটের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? ন্যূনতম ১০ টি কারন জেনে নিন –
কেন আপনার ব্যক্তিগত/ব্যবসায়িক/পণ্য/সেবা প্রদর্শনের জন্য এবং ব্যবসায়ের উত্তরোত্তর সফলতার জন্য ওয়েবসাইট থাকা অবশ্যই জরুরী??? আপনার ব্যবসায়ের ওয়েবসাইট কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?? আপনার প্রতিযোগী আপনার থেকে কেন এগিয়ে যাচ্ছে? আমরা আপনাকে অন্তত ১০ টি কারন জানাতে পারি যে, একটি প্রতিষ্ঠানের/ব্যক্তির/পণ্যের/সেবার জন্য একটি ওয়েবসাইট কতটা গুরুত্ব বহন করে। আসুন জেনে নিই…
১. তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ঃ
আপনার প্রতিযোগী ব্যবসায়ী তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা করছে ফলে তারা আপনার থেকে অনেকগুন বেশি বিক্রি পাচ্ছে এবং অনেকগুন বেশি প্রফিট করছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের চিন্তা ভাবনারও আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে দিনকে দিন মানুষও টেকনোলজির উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। আপনার ব্যবসাকে তথ্য-প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করতে একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট থাকা জরুরী।
২. ক্রেতার ওয়েবসাইট ভিজিট ঃ
মানুষ (ক্রেতা) প্রতিদিন নিয়ম করে তার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিজিট করছে এবং সেখান থেকে তার পছন্দমত পণ্য/সেবা ক্রয় করে নিচ্ছে অথবা ফ্রিতে তথ্য পেয়ে উপকৃত হচ্ছে এবং পরবর্তীতে তারাই ক্রেতা হয়ে ফিরে আসছে। যদি আপনার ব্যবসার ওয়েবসাইটই না থাকে তাহলে মানুষ/ক্রেতা আপনার সম্পর্কে অনলাইন থেকে কিভাবে জানবে?
৩. ওয়েবসাইটে পণ্য/সেবার তথ্য প্রদান ঃ
আপনার ব্যবসায়ীক ধরন যেটাই হোক, আপনার টার্গেটেড কাস্টমারও আপনার সম্পর্কে অথবা আপনার পণ্য/সেবা সম্পর্কে জানতে অনলাইনে ওয়েবসাইট খুজে বের করতে চেষ্টা করছে এবং আপনার প্রতিযোগীর ওয়েবসাইট পেয়ে যাচ্ছে সাথে সাথেই পছন্দমত পণ্য/সেবা ক্রয় করছে আর আপনি প্রতিযোগী থেকে পেছনে পড়ে থাকছেন।
৪. আপনার পণ্য/সেবার বিক্রি বাড়ানো ঃ
উপরের ৩টি পয়েন্ট থেকে স্পষ্ঠত প্রমানিত হয় আপনার প্রতিযোগী ব্যবসায়ীর একটি ওয়েবসাইট থাকার কারনে তার পণ্য/সেবা সম্পর্কে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ জানে এবং আপনার প্রতিযোগীর বিক্রি কয়েকগুন বেড়ে যায়। আর আপনি আপনার ব্যবসায়িক প্রতিদন্দ্বী থেকে নিয়মিত পিছিয়ে থাকছেন।
হয়তো আপনার ব্যবসায়ের সেবা/পণ্য আপনি নির্দিষ্ট কোন এরিয়াতে শো-রুম/অফিস নিয়ে পরিচালনা করছেন। আপনার একজন পরিচিত ক্রেতা আরো একটি সেবা/পণ্য ক্রয় করতে আপনার প্রতিষ্ঠানে গেল এবং দেখতে পেলো আপনার প্রতিষ্ঠান বন্ধ!! হয়তো ঐদিন সাপ্তাহিক বন্ধ ছিল অথবা বিশেষ কোন কারনে আপনার প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছে। আপনার ক্রেতার এই পরিস্থিতিতে প্রচন্ড মন খারাপ হবে। অথচ আপনার প্রতিযোগী ব্যবসায়ীর একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট থাকায় ক্রেতা বাসা থেকে বের হবার আগেই ওয়েবসাইট ভিজিট করে জেনে নিয়েছে আজকে আপনার প্রতিযোগীর প্রতিষ্ঠান খোলা আছে কি না, এমনকি ক্রেতা যে পণ্য/সেবার জন্য আসতে চাচ্ছেন সেটার ব্যাপারেও একটা সুস্পষ্ট তথ্য পাচ্ছে। আপনার প্রতিযোগী সম্ভাব্য ক্রেতার কয়েক ঘন্টা সময় সেভ করে দেবার কারনে ঐ ক্রেতার মনে আজীবন জায়গা করে নিলো। এখন বলুন ঐ ক্রেতা আপনার নাকি আপনার প্রতিযোগী ব্যবসায়ির জন্য তৈরী হলো?
৬. ক্রেতার সময় এবং পরিশ্রমের মূল্য ঃ
অনেকেই ক্রেতার সময় এবং পরিশ্রম বাচাতে ই-কমার্স বিজনেস শুরু করেছেন। আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকলে সেখানে আপনার পণ্য/সেবার সমস্ত ইনফো দিয়ে রাখা যায় এমনকি আপনি চাইলে সেটা অনলাইনে বিক্রিও করতে পারেন। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট পরিমান চার্জ ধার্য্য করে ক্রেতার বাসায়/অফিসে পণ্যটি পৌছে দিতে পারেন। আপনার বিক্রি হলো আবার ক্রেতার সময় এবং পরিশ্রম বেচে গেল। উভয়ই কিন্তু এখানে সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করতে পারলেন। যেহেতু আপনি তথ্যপ্রযুক্তির সাথে ব্যবসাকে যুক্ত করতে যন্ত্রণা মনে করছেন অথবা আলসেমী করছেন অথবা বাড়তি খরচ হিসেবে ভাবছেন ঠিক তখনি আপনার প্রতিযোগী সুযোগটা ব্যবহার করছে এবং আপনাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
৭. মার্কেটিং বেনিফিট ঃ
একটি প্রফেশনাল ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট আপনার ব্যবসার সারাজীবনের জন্য মার্কেটিং বেনিফিট তৈরী করে দিবে। আপনার ক্রেতারা আপনার ওয়েবসাইটে দেওয়া পণ্য/সেবার তথ্যের সাথে যদি বাস্তবিক সুবিধা পেয়ে থাকে তাহলে তারাই আপনার ওয়েবসাইটকে মানুষের কাছে প্রোমোট করবে। সোস্যাল এ্যাঙ্গেজ আপনার বিজনেসের জন্য দারুন প্রফিট নিয়ে আসবে। আপনি যখন ভাবছেন ধুরো এই সব ভেজাল কেন করবো, ক্রেতা আমার শো-রুম/অফিস থেকেই পণ্য/সেবা নিয়ে যাবে ঠিক তখন আপনার প্রতিযোগী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পণ্যের অর্ডার নিয়ে ক্রেতার বাসায় পণ্য ডেলিভারীতে ব্যাস্ত সময় পার করছে।
৮. ব্যবসায়িক সুনাম/ গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ঃ
আপনার ব্যবসায়ের একটি পূর্ণাঙ্গ এবং প্রফেশনাল ওয়েবসাইট যেখানে আপনার পণ্য/সেবার সম্পূর্ণ তথ্য বিদ্যমান থাকে তখন মানুষের কাছে আপনার প্রতিষ্ঠানের একটি ব্রান্ডভ্যালু তৈরী হয় এবং সবার কাছে আপনার প্রতিষ্ঠানের সুনাম/গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে, আপনার বিক্রি বেড়ে যাবে এবং তুলনামূলকভাবে প্রফিটও কয়েকগুন বেড়ে যাবে। আপনি যখন ভাবছেন আপনার প্রতিষ্ঠানের/পণ্যের/সেবার ক্রেতার অভাব হবেনা ঠিক তখন আপনার প্রতিযোগী তার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ নতুন ক্রেতার কাছে তাদের প্রতিষ্ঠান/পণ্য/সেবা নিয়ে বিস্তর তথ্য পৌছে দিচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন আপনার বর্তমানের ক্রেতা আপনার থেকে পন্য/সেবা নিতে চাইবে না। কারন ইতিমধ্যে আপনার বর্তমান ক্রেতা অনলাইনের মাধ্যমে আপনার প্রতিযোগীর খোজ পেয়ে গেছে এবং কিছু অতিরিক্ত সুবিধার আশ্বাসও পেয়েছে।
৯. সচরাচর প্রশ্নের উত্তর ঃ
সব মানুষেরই যেকোন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান পণ্য/সেবা সম্পর্কে কমন কিছু জিজ্ঞাসা থাকে যেগুলোর উত্তর জেনে মানুষ সেই ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান/পণ্য/সেবা সম্পর্কে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চায়। আপনার ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটে এমন যেকোন জিজ্ঞাসার একটি লিস্ট তৈরী করে সেগুলোর উত্তরও রেখে দিতে পারেন। আপনার প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও আপনার ওয়েবসাইট খোলা থাকে সব সময় ফলে যেকেউ আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনার ওয়েবসাইট থেকেই জেনে নিতে পারছে এমনকি যখন আপনি ঘুমিয়ে আছেন তখনও!! কি ? খুব বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে? না, আপনার প্রতিযোগী সত্যিই আপনার থেকে এগিয়ে যাচ্ছে এই বিশ্বায়নের সাথে তালমিলিয়ে।
১০. ব্রান্ডভ্যালু এবং বিজ্ঞাপন সুবিধা ঃ
একটি প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ডভ্যালু কতটা জরুরী সেটা বলে শেষ করা যাবে না। এমনকি একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনেও প্রচুর বাজেট রাখতে হয়। প্রতিযোগীদের থেকে একটু এগিয়ে থাকতে হলে ব্র্যান্ডভ্যালু ক্রিয়েট করা এবং বিজ্ঞাপনে ব্যয় করা সাধারণ নিয়ম। একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট ব্যান্ডভ্যালু ক্রিয়েট এবং বিজ্ঞানের কাজটা খুব সুন্দরমত করে দিতে পারে। ভাবছেন ব্র্যান্ডভ্যালু, বিজ্ঞাপন এইগুলো আমরা অফলাইনে করে থাকি। আপনি জানেন? মানুষ ঘুম থেকে উঠেই বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় অনলাইনে বিভিন্ন সাইট ভিজিট করে?? শুধু অফলাইনে ব্যবসা করার দিন ফুরিয়ে আসছে, দ্রুতই অনলাইনে মুভ করুন, ব্যবসায়ের বিক্রি ও মুনাফা বৃদ্ধি করুন।
শেষ কথা ঃ
ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান/ব্যবসা/পণ্য/সেবা সবকিছুর জন্যই একটি ওয়েবসাইট খুব গুরুত্ব বহন করে। তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের যুগে আমরা যদি এখনো এ্যানালগ ভাবধারা নিয়ে বসে থাকি তাহলে আমরা আমাদের প্রতিযোগীদের থেকে কয়েকধাপ পিছিয়ে থাকবো এমনকি কোন এক সময় প্রতিযোগীদের উত্তরোত্তর সাফল্যের কারনে আমাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান হুমকির সম্মুখীন হবে।